poddoja No Further a Mystery

পদ্মজা চোখ খুলে মাকে দেখে দ্রুত উঠে বসে। যেদিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয় সেদিনই হেমলতা ডেকে তুলেন। পদ্মজা অপরাধী কণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘বেশি দেরি হয়ে গেছে আম্মা?’

এই হলো পদ্মজার তিন সন্তানের মা হওয়ার গল্প। সিলেটে তাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সব সমস্যা পেরিয়ে আজ সে এক বেসরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষিক। বিশাল চা বাগানের মধ্যিস্থলে এক কোয়ার্টারে তারা থাকে। তাদের বাড়িটি এক তলা।

আমির চকিতে তাকালো। পদ্মজা কথাটা বলে কাঁপতে থাকলো। নিয়তি তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!

আমার বাবু কেমনে আমার হাত থাইকা ছুইটা গেলো? বাপের রক্ত কেমনে পাইলো?’

পূর্ণা স্কুল জামা পরে পদ্মজাকে ডাকল, ‘আপা? এই আপা? স্কুলে যাবি না? আপারে…”

বিছানার উপর কাঁথা মোড়ানো ফরিনার দূর্বল দেহটা শুয়ে আছে। বিদ্যুত নেই। ঘরের এক কোণে লণ্ঠন জ্বলছে। ফরিনার চোখ বোজা। লতিফা পায়ে পায়ে হেঁটে এসে নিঃশব্দে ফরিনার শিয়রে দাঁড়াল। ক্ষীণস্বরে ডাকলো,’খালাম্মা ঘুমাইছেন?’

পদ্মজা উপন্যাস লেখক ইলমা বেহরোজ, নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস!

হেমলতা চলে যেতেই পদ্মজার চোখ থেকে  টুপ করে এক ফোঁটা জল পড়ে পাতে। পদ্মজা দ্রুত হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের জল মুছে। পদ্মজার জীবনে জন্মদাতা আছে ঠিকই। কিন্তু জন্মদাতার আদর নেই। সে জানে না তাঁর দোষটা কী?

 মাহবুব মাস্টার বসে আছেন। তার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। তিনি অংকের মাস্টার। পদ্মজা আর তিনি এক স্কুলের শিক্ষক। ভালো পড়ান।  তার সামনে বসে আছে তিনটি ছেলেমেয়ে। এই তিনজনকে পড়ানোর জন্যই পদ্মজা মাহবুব মাস্টারকে ডেকেছে। মাহবুব মাস্টার বারো বছরের ছেলেটিকে আগে প্রশ্ন করলেন,'তোমার নাম কী?'

মনে হচ্ছে, একটা পাথরকে পিটানো হচ্ছে। যে পাথরের রক্ত ঝড়ে কিন্তু জবান খুলে না। তখন সেখানে আগমন ঘটে ইন্সপেক্টর তুষারের। তুষারকে দেখে ফাহিমা কাতর স্বরে বলল, ‘সম্ভব না আর। কিছুতেই কথা বলছে না।’

আলিয়া পদ্মজার ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,' তাহলে আমরাও খাব না।'

তার মন কাঁদে। পদ্মজা ছাদের মেঝেতে তাকিয়ে মনে মনে হেমলতাকে বললো,’ তোমার মেয়ে এতো খারাপ মানুষ কী করে হলো আম্মা? আমি পাপীকে ভালোবেসে পাপ করছি! ক্ষমা করে দিও আমাকে। ক্ষমা করতে না পারলে,অভিশাপে পুড়িয়ে ছাই করে দাও আমাকে।’

আমির read more নিশ্চুপ রইলো। কিছু বলার মতো ভাষা তার মস্তিষ্কে নেই। সে নির্বাক। পৃথিবীতে তিনটা মানুষকে সে ভালোবেসেছে। তার থেকে দুটো মানুষই তার পাপের জন্য তার থেকে দূরে সরে গিয়েছে। আরেকজন চলে যাওয়ার পথে। তারপরও আমির পারে না সবকিছু ছেড়েছুড়ে দূরে হারিয়ে যেতে। তার ইচ্ছে করে না,সে ভাবতে পারে না। পদ্মজা কাঁদতে কাঁদতে বললো,’আমার মা নেই,বাবা নেই। আমার স্বপ্ন,আশা,সবকিছুই তো আপনি ছিলেন। আপনাকে নিয়ে আমি বৃদ্ধ হতে চেয়েছি। সেই আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। শত,শত মেয়েকে পিটিয়ে জান ছিনিয়ে নেন। আল্লাহর দোহাই লাগে,আমার কষ্টটা অনুভব করুন। আমি হাশরের ময়দানে কী করে মুখ দেখাব?

রূপকথা বললো,'  মজনু স্যার বলেছেন,উনার সাথে প্রেম না করলে আমাকে ফেইল করিয়ে দিবেন। উনার সাথে যেন প্রেম করি। আমি ভয় পেয়ে যাই। আমি জানি না প্রেম কীভাবে করে। উনি যখন আমাকে ডাকেন,আমি যাই। আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। শরীরে হাত দেয়। আমার ভালো লাগে না৷ রাতে ঘুমাতে পারি না। ঠাম্মাকে বলছি,ঠাম্মা বলছে স্যার যা বলে শুনতে। তাহলে বেশি মার্ক পাবো। স্যার গত পরশু আমাকে বলছে,আমি আজ যেন স্যারের সাথে ঘুরতে যাই।'

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *